Logo
×

Follow Us

জলবায়ু পরিবর্তন

সেন্টমার্টিন দ্বীপ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা

Icon

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৩, ২১:০৫

সেন্টমার্টিন দ্বীপ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা

ঘূর্ণিঝড় মোখার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা সেন্টমার্টিন দ্বীপ ছাড়ছেন বাসিন্দারা। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বড় একটি অংশ সাগরে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আজ শনিবার (১৩ মে) বিকেলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মডেল পূর্বাভাসের বরাতে এ তথ্য জানান কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।

এতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের পুরোটা কক্সবাজার জেলার উপর দিয়ে অতিক্রম করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এতে সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া, ও মহেশখালী দ্বীপের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপন্ন হবেন। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে বন্যা, ভূমিধস, ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপের বড় একটি অংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভূ-কাঠামোর স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দ্বীপে আটকে পড়া মানুষদের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়ে যাবে, যদি না তারা দুইতলা বিল্ডিংয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে না থাকে।

শনিবার সকালে ১১টায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আমেরিকার পূর্বাভাস মডেলের বরাতে মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির  বাতাসের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ২১২ কিলোমিটার, যা দমকা হওয়ার গতিবেগে ঘণ্টায় ২৫৯ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেতে পারে।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের চারপাশে সমুদ্রে ৪৯ ফুট উচ্চতার ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে। যা ঘণ্টায় ১১ কিলোমিটার গতিবেগে সামনের দিকে এগোচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের স্থলভাগে প্রথম যে স্থানটিতে আঘাত করতে পারে তা হলো সেন্টমার্টিন দ্বীপ।

জানা যায়, বঙ্গোপসাগরের মধ্যে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রায় ১২ হাজার লোকের বাস। ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঠেকাতে দ্বীপের প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে টেকনাফে সরিয়ে নিয়েছে সরকার।

বাকি ৮ হাজারের বেশি মানুষকে রক্ষায় ৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ দ্বীপের ৩৭টি হোটেল রিসোর্ট-কটেজ খালি করা হয়েছে।

এদিকে শনিবার সকাল ৯টা থেকে সেন্টমার্টিনের দক্ষিণপাড়া ও হলবনিয়া গ্রাম থেকে লোকজনকে সরানো কাজ শুরু হয়। পাশাপাশি আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন এলাকায় চালানো হয় প্রচারণা। 

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, শনিবার সকাল থেকে গুমোট অবস্থা বিরাজ করছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি, তবে ঝড়বৃষ্টি নেই, সাগর উত্তাল রয়েছে। 

তিনি জানান, দ্বীপের মাছ ধরার তিন শতাধিক ট্রলার আগেভাগে টেকনাফের খায়ূকখালী খাল ও শাহপরীর দ্বীপে পাঠানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার খবরে দ্বীপের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে আগেভাগে পরিবার নিয়ে টেকনাফে চলে গেছেন। 

স্থানীয়রা বলছেন, ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলে দ্বীপের অধিকাংশ ঘরবাড়ি বিলীন হতে পারে। কারণ দ্বীপের ৯০ শতাংশ মানুষের ঘরবাড়ি ত্রিপলের ছাউনিযুক্ত, বাঁশ ও পলিথিনের বেড়ার।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা এডভোকেট কেফায়েত উল্লাহ খান জানান, ইতোমধ্যেই সাগরের পানির উচ্চতা সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থলভাগের সাথে সমান হয়ে গেছে। এখানে জোয়ার ভাটার কোনো তারতম্য নেই। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে  ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তারা সাইক্লোন সেন্টার ও স্কুল মাদ্রাসাসহ হোটেলগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যেকোনো দুর্ঘটনা এড়িয়ে মানুষকে নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার জন্য। 

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন তাদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫